আজকালকার দিনে মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য যত বাড়ছে,তেমনই অসুখ-বিশুখও বাড়ছে।

আজকালকার দিনে মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য যত বাড়ছে, তেমনই অসুখ-বিশুখও বাড়ছে। ইদানিং বুকে ব্যথার ব্যাপারটা অনেক বেড়েছে। আর যেহেতু এখন হৃদরোগের সমস্যা রীতিমতো অতিমারীর সমস্যা আকার ধারণ করেছে, ফলে বুকে ব্যথা হলেই মানুষের মনে ধরফড়ানি শুরু হয়ে যায়। অনেকে যেমন বুকে ব্যথা হলেই ডাক্তারের কাছে ছোটেন, আবার তেমনই অনেকে বুকের ব্যথাকে পাত্তাই দিতে চান না। বুকের ব্যথা যেমন মারাত্মক পরিস্থিতির তৈরি করতে পারে, হৃদরোগের গুরুতর কারণ হতে পারে, তেমনই গ্যাস, অ্যাসিডিটি কিংবা পেশিতে টান ধরার জন্যেও বুকে ব্যথা হতে পারে। সুতারাং বুঝতেই পারছেন, বুকের ব্যথার একাধিক কারণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বুকে ব্যথা নিয়ে মানুষের মনে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সেই ধোঁয়াশা কিছুটা দূর করতেই এই প্রতিবেদন।

বুকে ব্যথার কারণ ১
অনেক কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। তবে আমরা অনেক সময় মনে করি হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে শুধু বুকে ব্যথা হয়। এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও মানসিক কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। আবার অনেকে মনে করে পেটে গ্যাস হওয়ার জন্য বুকে ব্যথা হতে পারে। আর ব্যথা নিয়মিত হতে থাকলে আতঙ্ক দেখা দেয় হৃদরোগের। তবে পেটে গ্যাস হওয়া কিংবা হৃদরোগের সমস্যা ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ঋতুস্রাবের আগে, ভারী কিছু ওঠানো, প্রচণ্ড ভয় কিংবা মানসিক অস্বস্তি থেকেও বুকে ব্যথা হতে পারে। গুরুতর কোনও রোগ বাসা বাঁধছে কিনা তাই বা কে জানে! কীভাবে বুঝবেন বুকে ব্যথাটা সাধারণ না গুরুতর? জেনে নিন কয়েকটি লক্ষণ। বুকের বাম পাশে ব্যথা বুকে চাপ চাপ ব্যথা হচ্ছে? বুকের বাম পাশ বা গোটা বুক জুড়েই ব্যথা হচ্ছে? এবং এই ব্যথাটা লাগাতার চিনচিন করে হচ্ছে? পেটের উপর দিকে ব্যথা হচ্ছে? নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে? ঠিকমতো শ্বাস নিতে

পারছেন না? মাঝে-মাঝেই ঘাম হচ্ছে, বুক ধড়ফড় করছে? এধরনের ব্যথা কিন্তু হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে। হৃদরোগের ব্যথা অনেক সময় পেটের উপরের দিকে হয়। সাধারণত বাম দিকে হৃৎপিন্ডের নিচ বরাবর ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা অনেক সময় বাম হাত, গলা ও চোয়ালের নিচেও হয়। এই ব্যথাকে সাধারণ গ্যাসের ব্যথা ভেবে এড়িয়ে গেলে ভুল করবেন। এরজন্য অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলায় হবে আপনার প্রথম কাজ।

বুকে ব্যথার কারণ ২
তবে মানসিক কারণেও বুকে ব্যথা হওয়ার কিছু লক্ষণ রয়েছে। যে ব্যথাকে অনেকে আমরা হৃদরোগের লক্ষণ বলে মনে করি। আসুন জেনে নিই মানসিক কারণে হওয়া বুকে ব্যথার ৭ লক্ষণ-

১. প্রচণ্ড ভয় পেলে বুকে ব্যথা হতে পারে।আর ভয়ের কারণে যদি বুকে ব্যথা হয়েই থাকে, তবে তা নিঃসন্দেহে মানসিক। এ ছাড়া প্রচণ্ড মানসিক অস্বস্তি থেকে বুকে ব্যথা হতে পারে।  
২. চিকিৎসকদের মতে, বুকে ব্যথা নিয়ে অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বুকে ব্যথার পেছনে হৃদযন্ত্রের কোনো ভূমিকা নেই।
৩. বুক ব্যথার সঙ্গে রোগীর প্রচণ্ড ঘাম হ্ওয়া, শরীরে কাঁপুনি ও দম আটকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। 
৪. পেটের গোলমাল, বমিভাব, বোধশূন্যতা, শারীরিক ভারসাম্য হারানোর সমস্যা হতে পারে। 
৫. এ ধরনের বুকব্যথা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না, সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ব্যথা যেমন আকস্মিকভাবে আসে, তেমনি আকস্মিকভাবেই মিলিয়ে যায়। 
৬. আতঙ্ক বা মানসিক চাপ থেকে হওয়া ব্যথা বুকে শুরু হয় এবং তা যতক্ষণ স্থায়ী হয় ততক্ষণ একই স্থানে অনুভূত হয়। 
৭. হৃদরোগের উপসর্গ হিসেবে বুকের বাম পাশে ও মাঝখানেও ব্যথা হতে দেখা গেছে। তবে বুকের অন্য

যেকোনো অংশে ব্যথা হলে তার নেপথ্যের কারণটা মানসিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বুকে ব্যথার ঘরোয়া উপায় উপরোক্ত কারণে যদি বুকে ব্যথা হয় তাহলে তা থেকে নিরাময় পাওয়ার কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এগুলোকে অনেকে টোটকাও বলে। কোনও কারণে যদি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দেরি হয় তাহলে ঘরোয়া উপায়গুলো ট্রায় করে দেখতে পারেন।

 তুলসী বা তুলসী – তুলসীর বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে যা অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে। তুলসী পাতা ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি রোধ করে, তাই বুকে ব্যথা প্রতিরোধ করে। তুলসী বুকের ব্যথা এবং হৃদযন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা কমায়। কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের জন্য তাজা তুলসী পাতা থেকে বের করা রস পান করুন। কেউ স্বাদের জন্য রসে কিছু মধু যোগ করতে পারেন। এই পদ্ধতি বুকে ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।

 অ্যালোভেরা – অ্যালোভেরা একটি কার্যকর ঔষধি উদ্ভিদ। এটি চর্মরোগ এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। অ্যালোভেরার ঔষধি গুণাবলী হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে এবং বুকে ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। এক গ্লাস কুসুম গরম জলের সাথে এক চামচ অ্যালোভেরার রস খেলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে। প্রথমবার অ্যালোভেরা খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
 ডালিম – গবেষণা অনুযায়ী, ডালিম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং বুকের ব্যথা থেকেও মুক্তি দেয়। ডালিমের মধ্যে বেশ কিছু খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে যা স্ট্রেস লেভেল কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ডালিমের রস খাওয়া শরীরের পুষ্টি যোগায় এবং বুকের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
 আদা – আদা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। আদা একটি প্রাচীন ঔষধি যা অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় সাহায্য করে। আদায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। আদা খাবার বা চায়ের সাথে যোগ খাওয়া যেতে পারে। আদার টুকরোগুলিও কাঁচা খাওয়া যেতে পারে।
 হলুদ – হলুদ একটি খুব দরকারী ঘরোয়া প্রতিকার, যা অনেক স্বাস্থ্যের অবস্থা কমাতে সাহায্য করে। এর বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। হলুদ ধমনীতে প্লেক গঠন (কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম, শ্বেত রক্তকণিকা এবং ধমনীর প্রাচীরের অন্যান্য পদার্থ দ্বারা গঠিত) রোধ করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহের সম্ভাবনা কমায়। এটি বুকে ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে। হলুদ এক গ্লাস উষ্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি দৈনন্দিন খাদ্য প্রস্তুতির সাথে যোগ করা যেতে পারে। 
 রসুন – রসুন শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত অবস্থার নিরাময়েও উপকারী। বুকে ব্যথা নিরাময়ে রসুন একটি ভাল ঘরোয়া প্রতিকার বলে মনে করা হয়। রসুনের ব্যবহার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং বুকের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। রসুন শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ধমনীতে প্লাক জমা হওয়া রোধ করে। এটি শরীরে রক্ত ​​চলাচল উন্নত করতেও সাহায্য করে। এক গ্লাস উষ্ণ জলে রসুনের দুই থেকে তিন লবঙ্গ খেতে পারেন। 
 কোল্ড প্যাক – মাংসপেশিতে টান পড়লে বুকে ব্যথা হয়, ঠান্ডা প্যাক ব্যবহার করে জায়গাটি আইসিং করলে ফোলা কমে যায় এবং ব্যথা বন্ধ হয়।
 বাদাম – দিনে কয়েকটা বাদাম খাওয়া বা এক কাপ বাদাম দুধ পান করলে এসিড রিফ্লাক্স কমতে পারে যা এটি বুকে ব্যথার কারণ।
 গরম পানীয় – গরম জল বুকে ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে যা ফুলে যাওয়া বা গ্যাসের কারণে হতে
পারে। হিবিস্কাস চা, উদাহরণস্বরূপ, ফুসকুড়ি হ্রাস করে, পাশাপাশি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে।
 বেকিং সোডা – গরম বা ঠান্ডা জলে বেকিং সোডা যোগ করলে ক্ষারীয় দ্রবণ তৈরি হয় যা পাকস্থলীর এসিড কমায় এবং এর সাথে যুক্ত বুকের ব্যথাও কমায়।
 শুয়ে থাকুন – মাথা সামান্য উঁচু করে শুয়ে বুকেরব্যথা উপশম করা যায়।
 আপেল সিডার ভিনেগার – এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স উপশম করতে সাহায্য করে যা বুকে ব্যথা হতে পারে।
 মেথি বীজ – মেথি বীজ খাওয়া শরীরের
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, রক্তচাপ উন্নত করে এবং বুকের ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।
 স্বাস্থ্যকর খাওয়া।
 ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন

(বি দ্র – জরুরি কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান। ঘরোয়া টোটকার ভরসায় বসে থাকবেন না )

Popular Doctors

Related Articles